“বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম”
০১। স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে রচিত মহান সংবিধানের ১৬নং অনুচ্ছেদে “নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগতভাবে দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবে বৈদ্যুতিকরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যে গ্রামাঞ্চলের আমূল রুপান্তর সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন” মর্মে অঙ্গীকার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে গুরুত্বারোপ করে বলেছিলেন,“বিদ্যুৎ ছাড়া কোন কাজ হয় না, কিন্তু দেশের জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ লোক যে শহরের অধিবাসী সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকিলেও শতকরা ৮৫ জনের বাসস্থান গ্রামে বিদ্যুৎ নাই। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করিতে হইবে। ইহার ফলে গ্রাম বাংলার সর্বক্ষেত্রে উন্নতি হইবে। বন্যা নিয়ন্ত্রন ও গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ চালু করিতে পারিলে কয়েক বছরের মধ্যে আর বিদেশ হইতে খাদ্য আমদানি করিতে হইবে না। (দৈনিক ইত্তেফাক, ১১/০৭/১৯৭৫)। জাতির পিতার সুদুরপ্রসারী এ চিন্তা ভাবনার ধারাবাহিকতায় পল্লীর জনগণের দোর গোড়ায় বিদ্যুৎ সুবিধা পৌছানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়।
০২। বর্তমানে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) সমগ্র বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের পল্লী অঞ্চলের গ্রিড ও অফগ্রিডভূক্ত শতভাগ এলাকা বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতাধীন পবিসসমূহের বিদ্যুৎ চাহিদা প্রায় ৮১৯০ মেঃওঃ, যা দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রায় ৭৬ শতাংশ। মাসিক বিদ্যুৎ বিক্রয়ের পরিমাণ ২৫০০ কোটি টাকা। ২০০৯-২০২৩ খ্রিঃ পর্যন্ত নির্মিত বিদ্যুতায়িত লাইন ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কিঃমিঃ হতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ লক্ষ ৭৭ হাজার কিঃ মিঃ। অর্থাৎ বর্তমান সরকারের বিগত ১৩ বছরে প্রায় ৩ লক্ষ ৬০ হাজার কিঃমিঃ নতুন লাইন নির্মান করা হয়েছে এবং এই মেয়াদে গ্রাহক সংখ্যা ৭৬ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩ কোটি ৪২ লক্ষে উন্নীত হয়েছে, অর্থাৎ বিগত ১৩ বছরে বিভিন্ন শ্রেণীর ২ কোটি ৬৮ লক্ষ নতুন গ্রাহককে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার শিল্প সংযোগ ও ১ লক্ষ ৪১ হাজার সেচ সংযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে । একই সময়ে ৮০১ টি নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করে উপকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৯৮ টিতে উন্নীতকরণসহ উপকেন্দ্রের মোট ক্ষমতা ৪৬৫০ এমভিএ হতে ১২৮০০ এমভিএ বৃদ্ধি করে ১৭৪৬০ এমভিএ-তে উন্নীত করা হয়েছে। এই সময়ে সিস্টেম লস ১৮% থেকে হ্রাস পেয়ে প্রায় ৮.৯৯% এ দাঁড়িয়েছে।
০৩। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) এর আওতাধীন গ্রিডভুক্ত এলাকায় ৪৬১টি উপজেলা এবং অফগ্রিডভুক্ত এলাকায় পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলাসহ ১০৫৯টি গ্রাম রয়েছে। জাতির পিতার জন্মশর্তবার্ষিকী উপলক্ষে গ্রিডভুক্ত এলকার ৪৬১টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন কাজ আগস্ট’২০২০খ্রি. তারিখের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়ছে এবং পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলাসহ অফগ্রিডভুক্ত ১০৫৯ টি গ্রাম শতভাগ বিদ্যুতায়ন কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ইতোমধ্যে ২৮৮ টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন উদ্বোধন করা হয়েছে এবং আরো ১৭৪ টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে; যার মাধ্যমে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর আওতাভুক্ত ৪৬২টি উপজেলার সবগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
০৪। “শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এই মহতি স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রায় দ্বারপ্রান্তে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ “আলোর ফেরিওয়ালা” হয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করছেন। এতে গ্রাহক ভোগান্তি হ্রাস পাচ্ছে। আবেদনের ০৭ দিনের মধ্যে আবাসিক গ্রাহক এবং ১৮ দিনের মধ্যে শিল্প গ্রাহকদের সংযোগ দেয়ার নীতিমালা বাস্তবায়ন করার ফলে প্রতিমাসে প্রায় ০২ লক্ষাধিক নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের ৪ কোটি ২৫ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে বাপবিবোর্ডের সংযোগ ৩ কোটি ৪২ লক্ষ (প্রায় ৮০%)। “মুজিব বর্ষে” বাপবিবো-এর ভৌগোলিক এলাকার ১০০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে; যার মাধ্যমে আমাদের মহান সংবিধানের ১৬ তম অনুচ্ছেদে উল্লেখিত “রাষ্ট্রের অঙ্গীকার” বাস্তবায়িত হয়েছে।
০৫। এই কালজয়ী কর্ম উদ্যোগ-কে ধারণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাপবিবো কর্তৃক “উঠান বৈঠক”কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা /কর্মচারীগণ গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়ে গ্রাহকগণের অভিযোগ এবং সমস্যাসমূহ শুনে তা তাৎক্ষনিকভাবে সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন যা সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে/হচ্ছে।
০৬। বিদ্যুৎ উন্নয়নের চালিকাশক্তি। গ্রাম বাংলায় অবস্থিত দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কর্মক্ষম জনশক্তিতে পরিণত করার জন্য বিদ্যুৎ সরাসরি ভূমিকা রাখছে। সেচ ব্যতীত সকল ধরণের সংযোগের ক্ষেত্রে বিনামূল্যে দুই স্প্যান লাইন ও ৫০ কিঃওঃ পর্যন্ত ট্রান্সফরমার সরবরাহের কারণে বহুমুখী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষতঃ মহিলাদের আয়ভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছার কারণে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার “আমার গ্রাম আমার শহর” বাস্তবায়নের কাজ ত্বরান্ত্বিত ও সহজতর হয়েছে।
০৭। ডিজিটাল কার্যক্রমের আওতায় গ্রাহকের সুবিধার্থে অনলাইনে সংযোগ প্রদান, বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর, বিকাশ, রকেট, টেলিটক, সিউর ক্যাশ, এম ক্যাশ ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহকগণ নিজ ঘরে বসে অথবা নিকটবর্তী এজেন্ট ব্যাংক ও রিচার্জ পয়েন্ট থেকে সহজে বিল পরিশোধ করতে পারছে। এছাড়াও প্রায় ১৫ লক্ষ গ্রাহককে প্রি-পেমেন্ট মিটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবা দেয়া হচ্ছে যার মধ্যে ৮১% গ্রাহক অনলাইন এর মাধ্যমে রিচার্জ করে থাকে। উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমানে ৭ টি ব্যাংক/এমএফএস এর মাধ্যমে বিল আদায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিমাসে প্রায় ১০০% গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের তথ্য এসএমএস এর মাধ্যমে অবহিত করা হচ্ছে। এছাড়াও স্বচ্ছতার স্বার্থে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের ক্রয় প্রক্রিয়া e-GP এর মাধমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
০৮। ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিক্সার ব্যাটারি চার্জিং এর জন্য ১৪ টি সোলার চার্জিং স্টেশন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ টি উপজেলা সদরের প্রত্যেকটিতে ৩০ কিলোওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ৪০ টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়েছে এবং আরও ২০০০টি সোলার সেচ পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম চলমান আছে। ২৮৯ টি নেট মিটারিং ও ৫৬৭০ টি গ্রীড চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
০৯। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর কর্মকান্ডের মাধ্যমে “ জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা ২০১০ অনুযায়ী” ২০২০-২১ অর্থ বছরে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ খাতে ১ম সর্বোচ্চ আয়কর প্রদানকারী সম্মাননা পুরস্কার “দ্রুত বিদ্যুৎ সেবা ও সংযোগ” প্রদানকারী হিসাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সপ্তাহ-২০১৬ এ সেরা সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার এবং ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী শতভাগ বাস্তবায়ন করায় “সেরা প্রতিষ্ঠান হিসাবে” বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক প্রথম স্বীকৃতি পুরস্কার অর্জন করে। ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরে কেপিআই লক্ষ্যমাত্রা মূল্যায়নে যথাক্রমে ৯৯% ও ৯৯.৫% নম্বর অর্জন করেন। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সংস্থার কাজের গুণগতমানের উন্নতি স্বরুপ IMS (ISO-9001-2015, ISO-14001-2015,ISO-45001-2018) Certificate অর্জন করে যা বাংলাদেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে তুলনায় অনন্য। এছাড়াও বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড এর আওতাধীন ৮০টি সমিতি ISO-9001 Certificate অর্জন করেন।
১০। আমি অবহিত হয়েছি যে, নারায়নগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ বিগত ২৭/০৫/২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ বিতরণ শুরু করেছে। এ সমিতিতে ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিঃ পর্যন্ত ২,৯২১ কিঃমিঃ লাইন নির্মাণ করে মোট ২,৮১,৯৬০ জন গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সিষ্টেম লস কমিয়ে, বিদ্যুতের চুরি/অপচয় রোধ করে পরিচালন ব্যয়ের ঘাটতি মোকাবেলার লক্ষ্যে সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারী/বোর্ড পরিচালক/গ্রাহক সদস্যবৃন্দকেও সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। গত ২০২১-২০২২ অর্থ বৎসরে ২২ কিঃমিঃ লাইন ও ০৪টি নতুন উপকেন্দ্র আপগ্রেডেশন করে ৪০ এমভিএ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ১৫,৭৩৫ জন নতুন গ্রাহকের সংযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে।
১১। সমিতির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত কামনা করছি। সকলকে সততা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
মোহাং সেলিম উদ্দিন
চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস